ট্যুরিস্ট পুলিশ, খুলনা রিজিয়ন, খুলনার আওতাধীন গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পট সমূহ ও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা প্রদানই ট্যুরিস্ট পুলিশ, খুলনা রিজিয়ন, খুলনার মূল লক্ষ্য।
অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমে রূপসা এবং ভৈরব নদীর কূল ঘেষে অবস্থিত। ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ ও শিল্প-বানিজ্যিক নগরী খুলনা জেলা। খুলনা জেলার দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর উল্লেখযোগ্যা হলঃ- পৃথিবীর বৃহত্তম উপকূলীয় বনভুমি সুন্দরবন, খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর, বনবিলাস চিড়িয়াখানা, রূপসা নদী, বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি, দক্ষিনডিহি, ফুলতলা, খুলনা, আর্চার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এর জন্মস্থান, পাইকগাছা, খুলনা, খানজাহান আলী সেতু (রূপসা ব্রিজ), গল্লামারি বধ্যভুমি শহীদ স্মৃতি সৌধ, শহীদ হাদিস পার্ক, ভাষাস্মৃতি শহীদ মিনার, খুলনা ইত্যাদি। তন্মধ্যে খানজাহান আলী সেতু(রূপসা ব্রিজ) ও বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি, দক্ষিনডিহি, ফুলতলা, খুলনা অন্যতম পর্যটন স্থান। দেশের এই গুরুত্বপূর্ন পর্যটন এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরলসভাবে পর্যটকদের কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিতকল্পে আগামী দিনে ট্যুরিস্ট পুলিশ, খুলনা রিজিয়নের প্রতিটি সদস্য’কে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। পুলিশ রেগুলেশন্স অব বেঙ্গল, ১৯৪৩ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ বিধিমালা-২০২০ এবং দেশের প্রচলিত আইন অথবা সরকার কর্তৃক জারিকৃত বিধিবিধানের সহায়ক হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ, খুলনা রিজিয়নের জন্য প্রযোজ্য হবে।
আওতাধীন ক্ষেত্রসমূহ ও বর্ণনা:
০১. দক্ষিণ ডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সঃ-
দক্ষিণ ডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান, যা খুলনা শহরের দক্ষিণ ডিহি, ফুলতলা’য় অবস্থিত। খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ফুলতলা উপজেলার তিন কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে দক্ষিণ ডিহি অবস্থিত। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। কলকাতার জোড়া সাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী জন্মগ্রহণ করে ছিলেন এই দক্ষিণ ডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকী ত্রিপুরা সুন্দরী দেবী এই গ্রামেরই মেয়ে। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী দক্ষিণ ডিহির -ই মেয়ে। তার ভালো নাম ভবতারিণী, বিবাহের পর তার নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। ১৮৮২খ্রিঃ পূজার ছুটির সময় জ্ঞানদানন্দিনী দেবী উৎসাহী হয়ে বাস্তভিটা দেখবার অযুহাতে যশোরের নরেন্দ্রপুর যান। উদ্দেশ্য কাছাকাছি পীরালী পরিবারের মধ্য হতে বধু সংগ্রহ জ্ঞানদানন্দিনীর সঙ্গে কাদম্বী দেবী, বালিকা ইন্দ্রানি, বালক সুরেন্দ্র নাথ ও রবীন্দ্রনাথ আসেন পুরাতন ভিটা দেখতে সে সময় ফুলতলা গ্রামের বিনিমাধব রায় চৌধূরীর কন্যা ভবতারিনীকে তারা দেখেন। যৌবনে কবি কয়েক বার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণ ডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্মীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণে এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবি প্রয়ণ দিবস পালন করা হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি নামে খ্যাত। দ্বিতল পাকা ভবন আছে। কক্ষের ভিতর তার অনেক ছবি আছে।
সপ্তাহে প্রতি রবিবার বন্ধ থাকে। নির্ধারিত সরকারি ছুটির দিনের পরের দিন বন্ধ থাকে। সোমবার বেলা ০২টা থেকে বিকাল ০৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়াও মঙ্গলবার হতে শনিবার পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে বিকাল ০৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। ০৫ বছরের নিচে শিশুদের বিনামূলে প্রবেশেধিকার রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যন্ত শিশু ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য জনপ্রতি ০৫ টাকা করে প্রবেশ টিকিট। দেশী সকল দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। সার্কভূক্ত দেশের পর্যকটদের জন্য ২৫ টাকা এবং বিদেশী পর্যকটদের জন্য ১০০ টাকা জনপ্রতি নির্ধারণ করা আছে।
০২. খানজাহান আলী সেতু(রূপসা সেতু)
খানজাহান আলী সেতু (রূপসা ব্রিজ), রূপসা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু। এটি রূপসা ব্রিজ নামেও পরিচত। খুলনা শহরের রূপসা থেকে ব্রিজের দূরত্ব ৪.৮০ কিঃ মিঃ। এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশ দ্বার বলা যায়। কারণ এই সেতু খুলনা সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেয়ত মোংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কিঃ মিঃ প্রস্থ ১৬ মিটার। সেতুটিতে পথচারি ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে এবং দুই পারে দর্শনার্থীদের মূল সেতুতে উঠার জন্য দুইটি করে মোট চারটি সিঁড়ি রয়েছে। বর্তমানে এটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানের পরিনত হয়েছে। রাতে সেতুর উপর থেকে খুলনা শহরকে অপূর্বক সুন্দর মনে হয়। বিভিন্ন উৎসবের দিনগুলিতে হাজার হাজার দর্শনার্থী আগমন ঘটে। সেতুর নিচ হতে নৌকা ভাড়া নিয়ে নদীতে ঘোরাঘুরি, আনন্দ উপভোগ করা যেতে পারে। এছাড়া দুই ঈদ উপলক্ষ্যে ব্রিজের নীচে প্রচুর জনসমাগম হয়। জাপানি সহায়তায় নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্ত স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং উদ্ধোধন করেন বেগম খালেদা জিয়া।
রূপসা সেতু সপ্তাহে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সকাল ০৮.০০ থেকে রাত ০৮.০০ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে। সরকারি ছুটির দিন এবং বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে ব্রিজ এলাকায় প্রচুর পর্যটকদের সমাগম হয়।